শিল্পে পরিমিতিবোধ থাকা জরুরি

বিধান রিবেরু প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২, ১০:৫৪ পিএম শিল্পে পরিমিতিবোধ থাকা জরুরি

বাঙালি কি বাচাল? সেটা জরিপ চালানোর পর সঠিক করে বলা যাবে। তবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র দেখলে অতিকথনের প্রবণতা তো দেখা যায়ই, উপরন্তু দর্শকদের বোকা ভেবে চোখে আঙুল দিয়ে ছবির অর্থ বুঝিয়ে দেওয়ার ঝোঁকও দৃষ্টিগোচর হয়। এটা করতে  গিয়ে পরিচালক অনেকসময় অযথা, দৃশ্যের পর দৃশ্য জুড়ে যেতে থাকেন, যা অপ্রয়োজনীয়।

শিল্প অনেক বেশি আদরনীয় হয়ে ওঠে আড়ালের কারণে। শিল্পে আড়াল থাকতে হয়, রূপ থেকে রূপান্তর এবং নাম থেকে নামান্তর, এই টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে বুনে যেতে হয় শিল্পের বয়ান। সে কারণেই পর্নোগ্রাফি কোনো শিল্প নয়। ইঙ্গিত, একাধিক অর্থ, রূপক, মিতবাক ইত্যাদি হলো ভালো মানের শিল্পের কার্যকরী উপাদান। উৎকৃষ্ট শিল্প কখনো অতিকথনের দোষে দুষ্ট হয় না। কিন্তু বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রায়ই হয়ে ওঠে ‘টকিং হেড’, অর্থহীন দৃশ্যের বিজ্ঞাপন।

আমাদের দেশের বিজ্ঞাপনেও একইরকম চরিত্র প্রকাশিত। দেখবেন কোন খালি জায়গা রাখতে চায় না। সব জায়গায় কিছু না কিছু লেখা থাকবেই। তেমনি চলচ্চিত্রের বেলাতেও দেখা যায়, পরিচালকগণ যে বক্তব্য এক শটেই সারতে পারতেন, সেখানে একাধিক শটের সমাহার ঘটান; মনে সন্দেহ, যদি দর্শক বুঝে উঠতে না পারে? তো এমন সন্দেহের বশবর্তী হয়ে পরিচালক সংলাপেও একই বিষয় বারবার বলিয়ে নেন অভিনয়শিল্পীদের দিয়ে। এতে ছবিটি ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে এবং দর্শকও বিরক্ত বোধ করেন।

অনেক কথা অল্পতে বলার কৌশল রপ্ত করা সহজ ব্যাপার নয়, দৃশ্য মাধ্যমে তা আরো বেশি সংপ্রশ্নবিদ্ধ বা চ্যালেঞ্জিং। চলচ্চিত্রে তাই মিজোঁসেন, মন্তাজ ও রংয়ের বিন্যাসের উপর দখল থাকার পাশাপাশি পরিচালকের দেশ-বিদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা খুব দরকার। অন্তত যে বিষয়ের উপর তিনি কাজ করছেন সেটার উপর জ্ঞান অর্জন করা অবশ্যকর্তব্য। ভাসা ভাসা জানা দিয়ে চলচ্চিত্রের ভাষাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা অসম্ভব। দৃশ্যমাধ্যমের ভাষাকে বশংবদ করতে চাইলে গভীর মনোনিবেশের কোন বিকল্প নেই। আর শিল্পের পরাকাষ্ঠায় পৌঁছানোর কোন হ্রস্বতর পথও নেই। গভীর ধ্যান, চর্চা ও অনুশীলনই পারে অতিকথন ও অতিদেখানোর প্রবণতা কমিয়ে মেদহীন, নান্দনিক শিল্পের জন্ম দিতে।