সিনেমা দর্শন পত্রিকার প্রথম সংখ্যার (২০২০) সম্পাদকীয় ও সূচি নীচে দেয়া হলো।
সম্পাদকীয়
আমরা চলচ্চিত্র দেখি, ভাবি, পাঠ করি, তর্জমা করি, সেটি নিয়ে আলাপ করি, বাহাস করি, লিখি, ছাপাই কতকিছু করি। চলচ্চিত্রকে ভালোবাসে বলেই লোকে এসব করে। আমাদের ভালোবাসা ‘সিনেমা দর্শন’ নাম ধারণ করেছে। আপাতত আশা, এই ভালোবাসা বছরে একবার দর্শন দেবে এবং চলচ্চিত্র নিয়ে আমাদের বোঝাপড়াকে দর্পনের সামনে দাঁড় করাবে।
করোনা মহামারীর ভেতরে পত্রিকাটি বেরুচ্ছে বলে কিছুটা সঙ্কোচ কাজ করছে, যদিও প্রস্তুতি গত বছর থেকেই চলছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে পাঠিকার হাতে ‘সিনেমা দর্শন’ আরো আগেই পৌঁছাতো। তবে দেরিতে হলেও যে পত্রিকা বেরুচ্ছে তাতেই আমরা হৃষ্ট।
‘সিনেমা দর্শনে’র একটি বৈশিষ্ট্য হবে: এতে প্রতি সংখ্যায় চলচ্চিত্র দর্শন বা ইংরেজিতে বললে ফিল্ম ফিলোসফি সম্পর্কিত এক বা একাধিক লেখা থাকবে। এবারের সংখ্যায় রয়েছে দুটি লেখা। লিখেছেন এপার বাংলার দার্শনিক ও চিন্তাবিদ সলিমুল্লাহ খান এবং ওপার বাংলার বুদ্ধিজীবী ও চলচ্চিত্র পণ্ডিত সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। দুজনের কাছেই আমরা কৃতজ্ঞ। এছাড়া প্রতি সংখ্যায় একটি করে ক্রোড়পত্র রাখারও চেষ্টা করা হবে। এবার যেমন রয়েছে ইতালির মশহুর চলচ্চিত্র পরিচালক ফেদেরিকো ফেলিনির (১৯২০-১৯৯৩) জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে একটি ক্রোড়পত্র। আর বাদবাকি লেখাও সংকলিত হয়েছে পত্রিকার মেজাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে।
প্রচ্ছদের ব্যবহৃত ছবিটি ফেলিনির ‘সাড়ে আট’ ছবি থেকে নেয়া। দুটি কারণে ছবিটি প্রচ্ছদপটে তোলা হয়েছে, এক: ‘সিনেমা দর্শন’ পত্রিকার যে ভাবজগত তার সাথে এই ছবিটি মিলে যায়। ছবিতে দুই স্থানে থাকা দুই রকম দৃষ্টিকোন ধরা পড়ছে, যা আমাদের ‘সিনেমা দর্শন’ পত্রিকার নামের মতোই: দেখা অর্থে দর্শন, আবার চলচ্চিত্র বিষয়ক জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা অর্থেও দর্শন। দুই: মহাত্মা ফেলিনির জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।
সম্পাদকীয় দীর্ঘ না করে শুধু বলতে চাই প্রথম সংখ্যায় যারা লেখা দিয়েছেন, তাঁদের অর্বুদ ধন্যবাদ। আমার বিশ্বাস, ভবিষ্যতেও আমাদের জন্য লেখকদের এই ভালোবাসা জারি থাকবে। কৃতজ্ঞতা জানাই জহিরুল ইসলাম কচি, জাঈদ আজিজ, সাইফুল হক অমি, হাসান খুরশীদ রুমী, দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় ও আজিজুল রাসেলকে।
ছোট কাগজ করতে গেলে অতর চিত্রপরিচালকের গুণ আয়ত্ত করতে হয়, মানে একার হাতেই অনেক কাজ সেরে ফেলতে হয়। আমার বেলাতেও তাই হয়েছে, আর সেজন্য ভুলত্রুটি থাকার শঙ্কাও বেড়েছে। আগেভাগে ক্ষমা চেয়ে রাখছি। বানানের ক্ষেত্রে সর্বনাম ও অব্যয় উভয়ক্ষেত্রেই ‘কি’ বানানটি রাখা হয়েছে। প্রথম প্রবন্ধে ইঙ্গমার বেরিম্যানকে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ইঙ্গমার বার্গম্যান লিখেছেন, সেটাই রাখা হয়েছে। সলিমুল্লাহ খানের নিজস্ব বানানরীতিও পাল্টানো হয়নি। অন্য লেখাগুলোতে বানান ও উচ্চারণে সমন্বয় করার চেষ্টা হয়েছে।
‘সিনেমা দর্শন’ যদি আপনাদের বিক্ষিপ্ত মনের কিছুটা হলেও আকর্ষণ করতে পারে, তাহলেই এই আকালে পত্রিকা বের করার কষ্ট সার্থক হবে।
বিধান রিবেরু
৩০ আগস্ট ২০২০, ঢাকা
সূচি
মূল প্রবন্ধ
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়—দেখা থেকে দর্শন: চলচ্চিত্র
সলিমুল্লাহ খান—দৃষ্টি ও অদৃষ্ট: জাক লাকাঁর ভ‚মিকা
মূল্যায়ন
লাইল পিয়ারসন—আলমগীর কবির: বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রকার
বিধান রিবেরু—আমজাদ হোসেনের চলচ্চিত্র: মার্কসবাদের প্রভাব ও অভাব
মুখোমুখি
তারেক আহমেদ (ভূমিকা ও সাক্ষাৎকার গ্রহণ) —আমরা কি সত্যিকার অর্থেই স্বাধীন হতে পেরেছি: বেবী ইসলাম
ফেলিনি ১০০
সৈকত দে—বিস্মরণবিরোধী ফেলিনি : জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধা
বিধান রিবেরু—কেন ফেলিনি
রুদ্র আরিফ (অনূদিত সাক্ষাৎকার)—স্বপ্নের চেয়ে সৎ আর কিছুই নেই: ফেদেরিকো ফেলিনি
পুনর্দেখা
ফরিদুর রহমান—দ্য সেভেন্থ সিল ও মান্টো
সামি আল মেহেদী—দার্শনিক ভাবনা সমৃদ্ধ পনেরো সিনেমা
বইয়ের আলাপ
অর্ণব চক্রবর্ত্তী—ঋত্বিককে প্রতীতির শেষ ভালোবাসা
আশিক মাহামুদ শ্যামল—সত্যজিতের কলকাতা ত্রয়ী: রাজনৈতিক অবস্থান অন্বেষা
অপ্রকাশিত চিত্রনাট্য
তুষার আবদুল্লাহ—মন বাকসো
উৎসবের খবর
আসিফ রহমান সৈকত—ফিরে দেখা: ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২০