কুকুরের ক্ষমতা নিয়ে বিস্তর গবেষণা দুনিয়াব্যাপী হয়েছে। সম্প্রতি আবারো তা শুরু হয়েছে, তবে আসল কুকুর নিয়ে নয়, জেন ক্যাম্পিওন পরিচালিত ওয়েস্টার্ন সাইকোলজিকাল ড্রামা 'দ্য পাওয়ার অব দ্য ডগ' (২০২১) ছবিটি নিয়ে। প্রশ্ন জাগে এখানে কুকুর কে, আর তার ক্ষমতাই বা কেমন?
ছবিতে দেখা যায় মন্টানাতে দুই ভাই ফিল ও জর্জের বিশাল খামার রয়েছে। ১৯২৫ সাল। ক্যাটেল ড্রাইভ করতে গিয়ে তাদের সাথে দেখা হয় এক বিধবার। সেই বিধবা রোজের আবার এক সাবালক ছেলে রয়েছে, নাম পিটার। দুই ভাইয়ের ভেতর অপেক্ষাকৃত নরম মনের মানুষ জর্জের সাথে রোজের মন দেয়ানেয়া হয়। যদিও পুরুষত্ব ফলানো ছোট ভাই ফিল সেটা পছন্দ করেনি। এমনকি রোজের ছেলে পিটারকেও সে উত্যক্ত করে, মেয়েলি স্বভাবের কারণে। ফিলের নিষেধ সত্ত্বেও, পিটারের মা রোজকে বিয়ে করে নিজেদের খামারবাড়িতে নিয়ে যায় জর্জ। তাতে অশান্তি আরো বাড়ে। পুরুষতান্ত্রিক হুমকি সর্বক্ষণ মাথার উপর খড়গের মতো ঝুলতে থাকে রোজের। হতাশার চোটে এক পর্যায়ে রোজ এলকোহোলিক হয়ে পড়ে। আর পুরো বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি ছেলে পিটার। প্রথমত তাকে উত্যক্ত করায় সে পিটারকে অপছন্দ করতো। দ্বিতীয়ত তার মায়ের এই অবস্থার জন্যও যে পিটার দায়ী সেটা সে জানতো। কিন্তু সব হিসাবনিকাশ পাল্টে যায় ফিলের গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় জেনে ফেলার পর। ফিলের আগলে রাখা দুনিয়ার পিটার অনুপ্রবেশ করে। পিটার ও ফিলের ভেতর একধরনের সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে। কিন্তু পিটার তার সংকল্প থেকে সরে আসেনি। সেসময় অ্যানথ্রাক্সে প্রচুর জীবজন্তু মারা যাচ্ছিল। পিটার ডাক্তারি পড়তে চায়। সে নির্বিকার ভঙ্গিতে জ্যান্ত অথবা মরা, সকল জন্তুর গায়ে ছুড়ি চালাতে জানে। তাকে অপমান ও মায়ের দুর্দশার জন্য দায়ী ফিলকে শাস্তি দেয়ার জন্য সে অ্যানথ্রাক্সের শরণাপন্ন হয়। ফিলকে সে আক্রান্ত করে ওই ভাইরাসটি দিয়ে। মারা যায় একসময়ের দাপুটে ফিল। শান্তি নেমে আসে তার মায়ের জীবনে। এমনকি ফিলের আপন ভাই জর্জের জীবনেও। কারণ সেও তটস্থ থাকত ফিলের কারণে। দাম্ভিক ও রগচটা ফিলের মৃত্যুর পর পিটার বাইবেল স্তবসংগীত থেকে উচ্চারণ করে “Deliver my soul from the sword; my darling from the power of the dog.”
বলার অপেক্ষা রাখে না ফিল ও তার গুরু ব্রোংকো হেনরিই হলো এখানে কুকুর। তাদের ছায়া খামারবাড়িটির উপর চেপে বসেছিল। পর্বতের উপরও কাকতালীয়ভাবে সেই কুকুরের ছায়া দেখা যেত সূর্যাস্তের কালে। সেটি শুধু ব্রোংকো দেখতে পেতো। তার পর দেখতে পেতো ফিল। আর ফিল আবিষ্কার করে কুকুরের ছায়াটি পিটারের চোখেও পড়েছে। পিটার যেন এখানে যীশুখ্রিস্ট, নিজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসেছে মা ও মায়ের সংসারকে পরিত্রাণ দিতে। অ্যানথ্রাক্সের 'তরবারি' দিয়ে সে কুকুরের ক্ষমতাকে কতল করে। এবং পরিশেষে 'প্রিয় পাত্রে' পরিণত হয় গোটা জর্জ পরিবারের।
নারী নির্মাতার চোখ দিয়ে পুরুষতন্ত্র (ফিলের আচরণ), নারীর প্রতি পুরুষের ভালোবাসা (জর্জের প্রেম স্ত্রীর প্রতি) ও পুরুষের সমকাম (ফিল-পিটারের সম্পর্ক) দেখার জন্য এই ছবিটির আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ছবিটি হয় তো প্রতিশোধের গল্প বলে, তবে অনেকগুলো স্তরে ছবিটি এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন পরিচালক ক্যাম্পিওন। শুধু তাই নয়, ফিল চরিত্রে বেনেডিক্ট কামবারব্যাচ, রোজের চরিত্রে কারস্টেন ডানস্ট, জর্জ চরিত্রে জেস প্লেমনস ও পিটার চরিত্রে কোডি স্মিথ-ম্যাকফি প্রত্যেকেই দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। অ্যারি ওয়েগনারের সিনেমাটোগ্রাফি চোখে লেগে থাকে।