হলে গিয়ে যারা ছবি দেখেন, তারা চান বিনোদন। বিশেষ করে ভারতীয় সংস্কৃতিতে নাচ-গান-অ্যাকশনে ভরপুর সিনেমার বাজার বেশ ভালো। মানুষ বসে থাকে শুক্রবারের আশায়। নতুন সিনেমা মুক্তি পেলে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে দল বেধে সিনেমা দেখতে যাওয়ার জন্য। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন ভারতে সিনেমা হল বন্ধ ছিল। বেশিরভাগ ছবি যেগুলো হলে মুক্তির কথা ছিল সেগুলো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হয়েছে। কিন্তু হলে ছবি দেখার যে আনন্দ সেটা ফিরে এসেছে পুষ্পা: দ্য রাইজ ছবির মাধ্যমে।
তেলেগু ভাষায় নির্মিত হলেও এটি হিন্দিতে ডাবিং করে মুক্তি দেয়া হয়। ২০০ কোটি রুপি বাজেটে নির্মিত ছবিটি মুক্তির আগে থেকেই আলোচিত ছিল অভিনেতা আল্লু অর্জুনের জমকালো উপস্থিতি এবং গানগুলোর জন্য। মুক্তির পর প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি রুপি ব্যবসা করেছে ছবিটি। করোনাকালীন সময়ে প্রায় স্থবির হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলো এই ছবির মাধ্যমে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
এবার আসা যাক কি আছে পুষ্পাতে যার জন্য দর্শকরা এরকম হুমড়ি খেয়ে পড়েছে? পুষ্পাতে আছে বিনোদন। সাধারণ দর্শকদের মনোরঞ্জনের সব মসলাই এই ছবিতে বিদ্যমান। যেখানে দেখানো হয়েছে, পুষ্পা একজন কুলি থেকে কিভাবে চোরচালানিদের সর্দার হয়ে ওঠে। পিতৃপরিচয় নিয়ে ছোটবেলা থেকেই পুষ্পাকে নানা কটাক্ষ শুনতে হয়। সেজন্যই বুঝি আর সবার থেকে আলাদা, দুঃসাহসী এবং অসম্ভব জেদ নিয়ে বড় হয় সে। আর এভাবেই তার উত্থানের শুরু।
‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ নামে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। একে বলা হয়েছে ফার্স্ট পার্ট। অর্থাৎ নির্মাতারা আগে থেকেই এর সিক্যুয়াল বা দ্বিতীয় পর্ব চিন্তা করে রেখেছেন। প্রথম পর্বে পুষ্পার উত্থানের পাশাপাশি তার প্রতিকূল শৈশব-কৈশোরের গল্প দেখানো হয়েছে। আর দেখানো হয়েছে কিভাবে সে পরাক্রমশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের টপকে উঠে আসে ক্ষমতার শিখরে।
পুরো ছবি জুড়েই পুষ্পা অর্থাৎ আল্লু অর্জুনের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা গেছে। নাম ভূমিকায় যেমন অভিনয় করেছেন তিনি তেমনি ছবিটির সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার পুরো ভারটাই ছিল তার কাঁধে। সে ভার ভালোভাবেই সামলেছেন তিনি। যেখানে মে মাসে মুক্তি পাওয়া সালমান খানের ‘রাধে’ ছবিটি সুপারফ্লপ হয়েছে, সেখানে এক আল্লু অর্জুন যেন পুরো ভারতের সিনেমা শিল্পের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন পুষ্পা রাজ হয়ে। অধিকাংশ ভারতীয় গণমাধ্যমই বলছে, আল্লু অর্জুন এখন আর কোন আঞ্চলিক বা প্রদেশভিত্তিক তারকা নন। তিনি সমগ্র ভারতের তারকা।
পুষ্পার গল্পে নতুনত্ব তেমন কিছু নেই। এমন ধাঁচের গল্প আমাদের বহুবার বহুভাবে দেখা হয়েছে বলিউড এবং ঢালিউডে। তবে চিত্রনাট্য বেশ গোছানো যার কারণে বেশকিছু শক্তিশালী চরিত্র পর্দায় উঠে এসেছে। বিশেষভাবে বলতে হয় মাঙ্গালাম শ্রীনুর ভূমিকায় অভিনয় করা কমেডিয়ান সুনীলের কথা। কমেডিয়ান হিসেবে তেলেগু ছবিতে জনপ্রিয় হলেও এবার পুরোপুরি নিজেকে ভেঙে নতুনভাবে তৈরি করেছেন সুনীল। খলচরিত্রে তিনি দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন।
মালায়লাম ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা ফাহাদ ফাসিল এই প্রথম তেলেগু ছবিতে অভিনয় করেছেন। সেটাও খলচরিত্রে। একদম নতুন লুকে হাজির হয়েছেন তিনি এবং অল্প সময়ের জন্য এলেও দর্শকদের মন জয় করেছেন। পুষ্পার সিক্যুয়ালে ফাহাদ ফাসিলের চরিত্রটি আরো বেশি সময় পর্দায় থাকবে বলে ধারণা করা যায়।
এর পাশাপাশি রয়েছেন রাশ্মিকা ম্যান্ডেনা। এ ধরণের নায়ক নির্ভর ছবিতে তাকে সাধারণত দেখা যায় না। গল্পে তার ভূমিকাও খুব বেশি কিছু নয়। নায়কের প্রেয়সী হিসেবে তার উপস্থিতি সবসময়ই আবেদনময়ী করে তোলা হয়েছে। গানগুলোতেও তার উপস্থিতি সেই একই রূপে। একটি আইটেম গানে এসেছেন সামান্থা। এ ধরণের গানে তাকে আগে সেভাবে দেখা যায়নি।
তেলেগু নির্মাতা সুকুমার ছবিটির গল্প লিখেছেন এবং পরিচালনা করেছেন। নির্মাতা হিসেবে সুকুমারের চ্যালেঞ্জ ছিল পুষ্পার ইমেজকে পর্দায় প্রতিষ্ঠিত করা। সেটা তিনি ভালোভাবেই করেছেন। সিক্যুয়াল নির্মাণের ক্ষেত্রে তার চ্যালেঞ্জ হবে প্রথম ছবিটিকে ছাড়িয়ে যাওয়া। কারণ পুষ্পার সিক্যুয়াল নিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশা এখন আকাশচুম্বী। যেমন হয়েছিল বাহুবলী সিরিজের ক্ষেত্রে। বা সামনে মুক্তি পেতে যাওয়া কেজিএফ সিরিজের ক্ষেত্রে।
সব মিলিয়ে পুষ্পার কাজ ছিল দর্শকদের মনোরঞ্জন করা। সেই কাজটা ঠিকভাবেই হয়েছে। এ ধরণের ছবি নির্মাণে যে বিপুল আয়োজন দরকার তার কোনকিছুতে প্রযোজকরা কমতি রাখেননি। আর তাইতো ভাষা কিংবা অঞ্চলের গন্ডি পেরিয়ে পুষ্পা রাজ আজ সর্বত্র রাজত্ব করছে।